সালাত কায়েমের জরুরী বিষয়

 যে ফরজ কাজগুলো সালামের মধ্যে আদায় করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আরকান বলা হয়। সালাতের ৬টি আরকান রয়েছে, সেগুলো নিম্নে দেয়া হল-

১. তাকবিরে তাহরিমা বা আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করা।
২. কেরাম বা দাঁড়িয়ে সালাত পড়া। নারী-পুরুষ উভয়কে দাঁড়িয়ে সালাত পড়ত হবে। তবে অসুস্থ হলে বসে এবং বলতে অক্ষম হলে শুয়ে ইশারায় সালাত পড়তে হবে।
৩. কোরআন শরিফের কিছু অংশ পাঠ করা।
৪. রুকু করা
৫. সিজদা করা
৬. শেষ বৈঠকে বসা (যে বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করা হয় তাকেই বলে শেষ বৈঠক) ডানে ও বামে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা।

যে ফরজ কাজগুলো নামাজ শুরু করার আগেই করতে হয়, সেগুলোকে সালাতের আহকাম বলা হয়। সালাতের আহকাম মোট সাতটি। যথা-


১. শরীর পাক হওয়া : প্রয়োজনমতো অজু-গোসল বা তায়ামুমের মাধ্যমে শরীর পাক পবিত্র করা।
২. কাপড় পাক হওয়া, অর্থাৎ কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া।
৩. জায়গা পাক হওয়া (নামাজ পড়ার স্থান পাক হওয়া)।
৪. সতর ঢাকা (পুরুষের নাভীর উপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা এবং মহিলাদের মুখমণ্ডল হাতের কব্জি এবং পায়ের পাতা ছাড়া সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা)।
৫. কিবলামুখী হওয়া (কাবার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করা)।
৬. ওয়াক্ত হওয়া (সালাতের নির্ধারিত সময় হওয়া)।
৭. নিয়ত করা (যে ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে মনে মনে তার নিয়ত করা)।

নামাজের সুন্নতসমূহঃ


১)তাকবীর বলে দুই হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠান ।
২) হাতের আঙ্গুল পরস্পর পৃথক রাখা ।
৩) ইমামের জন্য নামায আরম্ভের তাকবীর উচ্চঃস্বরে পড়া ।
৪) ছানা পাঠ করা ।
৫) “আউযুবিল্লাহ্” পাঠ করা ।
৬) “বিছমিল্লাহ্” পাঠ করা ।
৭) সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ঈমাম ও মুস্তাদিগণের মৃদুস্বরে “আমীন” বলা ।
৮) পুরুষের জন্য নাভীর নীচে তাহরিমা বাঁধা আর স্ত্রী লোকের জন্য ছিনার উপরে তাহরিমা বাঁধা
৯) রুকুর তাকবীর বলা ।
১০) রুকুতে দুই হাঁটু ধরা ও আঙ্গুল সমুহ পরস্পর পৃথক রাখা ।
১১) রুকুর ভিতরে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাছবীহ্ বলা ।
১২) রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান ।
১৩) রুকু হতে উঠার সময়ে ইমামের “ছামিয়াল্লাহ হুলিমান হামীদা” ও মোক্তাদিগণের “রাব্বানা লাকাল হামদ” বলা ।
১৪) ছেজদায় গিয়ে দুই হাঁটু ও তাকবীর বলে বসা ।
১৫) ছেজদায় তাছবীহ্ পড়া ।
১৬) পুরুষের জন্য ছেজদাহ হতে উঠে ডান পা খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসা, আর স্ত্রীলোকের উভয় পা ডান দিকে বাহির করে ছতরের উপর বসা ।
১৭) ছেজদা থেকে উঠার পর এক তছবীহ্ পরিমাণ সময় বসে থাকা ।
১৮) দরুদ শরীফ পাঠ করা ।
১৯) দোয়ায়ে মাছুরা পড়া ।
২০) দুই দিকে ছালাম ফিরান ।

নামাজের মুস্তাহাবসমূহঃ


এক্বামতের সময়ে “হাইয়্যালাল ফালাহ্” বলামাত্র নামাযে ঠিকভাবে দাঁড়ান ।
তাকবীরে তাহরীমা বলার সময়ে আন্তিন হতে হাতের তালু বাহির করা ।
দাঁড়াবার সময়ে সিজদার জায়গার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
রুকুতে পায়ের পাতার দিকে দৃষ্টি রাখা ।
বৈঠকে কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা ।
সাধ্যানুযায়ী হাসি ও কাশি বন্ধ রাখা ।
রুকুতে মাথা ও পৃষ্ঠ ভাগ সমান উঁচু রাখা ।
সিজদায় প্রথমে দুই হাঁটু ,তারপর দুই হাত জমিনে রাখা, পরে নাক ও তারপরে কপাল জমিনে রাখা এবং সেজদা হতে উঠার সময়ে যথাক্রমে প্রথমে কপাল, পরে নাক উঠিয়ে তৎপর দুই হাত হাঁটুর উপরে রেখে বসা ।
সিজদায় দুই হাতের মধ্যে মাথা রাখা, নাক দুই বৃদ্ধাংগুলির মধ্যে বরাবর রাখা ।
হাত-পায়ের আঙ্গুলিসমূহ কেবলা মুখ করে রাখা ।
ছালাম ফিরানোর সময় দুই সিনার প্রতি দৃষ্টি রাখা ।
সেজদায় পুরুষের দুই হাত পৃথক ভাবে রাখা এইভাবে উঁচুতে রাখতে হবে যেন বকরীর বাচ্চা যাতায়াত করতে পারে । কিন্তু স্ত্রীলোকের জন্য সেজদায় এর বিপরীত করতে হবে । যেমন দুই হাত চাপিয়ে রাখা এবং রানের উপর পেট রাখা ।
তিন বারের অধিক-বেজোড় তছবীহ্ পড়া ।
ফযরের নামাযে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া।
আছরের নামাজে ( سورة الشمس – سورة البينة) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পড়া ।
মাগরিবের নামাজে ছোট ছোট সূরাহ (سورة الزلزال - سورة الناس) পাঠ করা ।
এশার নামাজে (سورة الحجراة – سورة البلد ) এর মধ্যে যে কোন ২টি সুরা পাঠ করা ।

নামাজের মাকরূহ বিষয়সমূহঃ


১)চাদর বা জামা না পড়ে কাঁধে ঝুলিয়া রাখা ।
২) ময়লা ধুলা-বালি লাগার ভয়ে কাপড়/জামা গুটানো ।
৩) আঙ্গুল মটকান ।
৪) বস্ত্র,শরীর অথবা দাঁড়ির সাথে খেলা করা ।
৫) এদিক ওদিক দেখা ।
৬) চুল মাথার উপরিভাগে বাঁধা ।
৭) বিনা ওজরে সেজদার স্থানের ইট-পাথর সরান ।
৮) আলস্যভরে শরীর মোড়ামুড়ি করা ।
৯) সিজদার সময়ে হাত বিছিয়ে দেওয়া ।
১০) আগের কাতারে স্থান থাকতে পিছনের কাতারে দাঁড়ানো ।
১১) অবহেলা করে খালি মাথায় নামায পড়া ।
১২) আকাশের দিকে তাকান ।
১৩) ভাল কাপড় থাকা সত্ত্বেও মন্দ কাপর পড়ে নামায পড়া ।
১৪) নামাযের মধ্যে কপালের মাটি মুছে ফেলা ।
১৫) কোন প্রাণীর ছবি সম্মুখে,ডাইনে,বামে,মস্তকের উপর বা কাপড়ের মধ্যে থাকা ।
১৬) সিজদার সময়ে বিনা কারণে হাটুর পূর্বে হাত মাটিতে রাখা ।
১৭) বিনা কারণে আসন পেতে বসা ।
১৮) ফরয নামাযে এক সূরা বার বার পড়া ।
১৯) কোন মানুষের মুখের দিক হয়ে নামায পড়া ।
২০) সিজদাতে পিঠ উভয় উরুর সহিত মিলিয়ে দেওয়া ।
২১) এক হাত বা তদুর্ধ স্থানে ইমামের দাঁড়ান ।
২২) উভয় সিজদার মধ্যে অথবা তাশাহুদ পড়ার সময়ে কুকুরের ন্যায় বসা ।
২৩) দুই হাতে মাটি ভর দিয়া উঠা ।
২৪) কোন সুন্নত পরিত্যাগ করা ।
২৫) নাক মুখ ঢেকে নামাজ পড়া

নামাজের ভঙ্গের কারণসমূহঃ


১। নামাযের মধ্যে কথা বলা।
২। নামাযের মধ্যে পবিত্র কোরআন দেখে পড়া।
৩। নামাযের ফরজসমূহের মধ্যে কোন একটি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বাদ পড়ে গেলে।
৪। বিনা কারণে কাশি দেয়া।
৫। নামাযের ভিতরে আঃ উঃ শব্দ করা।
৬। নামাযের ভিতরে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কোন কিছু খাওয়া।
৭। কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের সময় এমন ভুল করা যে ভুলের দরুণ অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়।
৮। নামাযে শব্দ করে হাসা।
৯। পুরুষের কাতারে মেয়ে লোক দাঁড়ানো।
১০। নামাযে ঘুমিয়ে গেলে।
১১। বিনা কারণে নামাযরত অবস্থায় এদিক ওদিক চলা ফেরা করা।
১২। ইমামের পূর্বে রুকূ, সেজদা ইত্যাদি করা।
১৩। আমলে কাসির করা (নামাযের মধ্যে এমন কাজ করা কেউ দেখলে যদি নামায পড়ছে বলে বুঝা না যায়। যেমনঃ দু হাতে কাপড় ঠিক করা)।
১৫। ছতর খুলে গেলে।
১৬। নামাযের ওয়াজিবসমূহের কোন একটি ছুটে গেলে এবং ছহো সিজদা ছেড়ে দিলে।
১৭। ব্যথার কারণে উচ্চস্বরে কান্না।
১৮। ওযূ ভঙ্গ হওয়া।
১৯। বেহুশ হয়ে পড়া

নামাজের ওয়াজিবঃ


নামাজের ওয়াজিব হচ্ছে যদি নামাজের ওয়াজিব কোন একটা ভুলক্রমে ছুটে যায় তবে সহু-সিজদা দিতে হবে, আর যদি সহু-সিজদা না দেয়া হয় তবে নামাজ আদায় হবে না।আর ইচ্ছাকৃত ভাবে ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নামাজ হবেনা। নামাজের ওয়াজিব হল ১৪ টি –
সুরা ফাতেহা পুরা পরা
সুরা ফাতেহার সাথে সুরা মেলানো
রুকু-সিজদায় দেরি করা
রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো
দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা
দরমিয়ানি বৈঠক অর্থাৎ দুইয়ের অধিক রাকাত নামাজের ক্ষেত্রে দুই রাকাত পরে আত্তাহিয়াতু’র জন্য বসা
উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পরা
ঈমামের জন্য কিরআত আস্তে’র জায়গায় আস্তে এবং জোরে’র জায়গায় জোড়ে পড়া
বিতর নামাজে দোআ কুনুত পড়া
দুই ঈদ’র নামাজে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর বলা
ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা
প্রত্যেক রাকাতের ফরয এবং ওয়াজিব’র তরতিব ঠিক রাখা
ইমাম’র অনুসরণ করা
সালাম ফেরানো
এখানে উল্লেখ্য যে আমরা রুকুতে দাঁড়ানো এবং দুই সিজদার মাঝখানে বসার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি করি।রুকু হতে দারানর সময় পুরা সোজা হয়ে দারাতে হবে এবং দুই সিজদার মাঝখানে একেবারে সোজা হয়ে বসতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই একবার তাসবিহ অর্থাৎ “সুবহানআল্লাহ” পড়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা উত্তম।এশা’র নামাজের পর বিতর নামাজে দোআ কুনুত পড়ার ব্যাপারটি অত্যন্ত জরুরি। যে দোআ কুনুত পরতে পারেনা সে মুখস্থ করবে।আর মুখস্থ করার সময় পর্যন্ত সে “ রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাত্নাউ ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাত্নাউ অয়াকিনা আজাবান্নার” একবার এবং তিনবার “আল্লাহহুম্মাগফিরলি” পরবে।

সালাতঃসানা


দো'আ ইস্তেফ্তাহ (সানা) পাঠ করা সুন্নাত। দো'আ ইস্তেফ্তাহ নিম্নরূপ

اَللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَاياَيَ كَمَا بَاعَدتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ. اَللَّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ. اَللَّهُمَّ اغْسِلْنِيْ مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرْدِ.

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-'ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাতা-ইয়া-য়া, কামা- বা-'আদ্তা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লা-হুম্মা নাক্কিনী- মিন খাতা-ইয়া-য়া কামা- ইউনাক্কাছ্ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্দানাসি, আল্লা-হুম্মাগসিলনী- মিন খাতা-ইয়া-য়া বিল মা-য়ি, ওয়াছ্ছালজি, ওয়াল বারদি।

অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপগুলো থেকে এত দূরে রাখ যেমন পূর্ব ও পশ্চিম পরস্পরকে পরস্পর থেকে দূরে রেখেছ। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার করে দাও, যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে (পবিত্র করার জন্য) পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও।[বুখারী ও মুসলিম]

অন্য এক হাদীসে আবু হোরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, যদি কেউ চায় তাহলে পূর্বের দো'আর পরিবর্তে নিম্নের দো'আটিও পাঠ করতে পারে। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা পাঠ করার প্রমাণ রয়েছে-

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণঃ সোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্মুকা, ওয়া তা'আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।

অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা'বূদ নেই।

পূর্বের দো'আ দু'টি ছাড়াও যদি কেউ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত অন্যান্য যে সমস্ত দো'আয়ে ইস্তেফ্তাহ বা সানা রয়েছে, তা পাঠ করে তবে কোন বাধা নেই। কিন্তু উত্তম হলো যে, কখনও এটি আবার কখনও অন্যটি পড়া। কারণ এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ অনুসরণ প্রতিফলিত হবে.

রুকু সিজদার নিয়ম

সূরা ক্বিরাতের পর "আল্লাহু-আকবার" বলে রুকুতে যাবে এবং নিম্নোক্ত রুকুর দোয়াটি পাঠ করবেঃ

سبحان ربي العظيم

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বি'আল 'আজীম
অর্থঃ আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
দো'আটি তিন বা তার অধিক (পাঁচবার/সাতবার) পড়া ভাল।

রুকু থেকে উঠার দোয়াঃ

سمع الله لمن حمده

উচ্চারণঃ সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্

রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার দোয়াঃ

ربنا ولك الحمد

উচ্চারণঃ রাব্বানা- ওয়া লাকাল হামদ্
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা।

এরপর আল্লাহু-আকবার বলে সিজদায় যাবে। এবং নিম্নোক্ত দোয়াটি তিনবার বা তার অধিক (পাঁচবার বা সাতবার) পাঠ করবে

سبحان ربي الأعلى

উচ্চারণঃ সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা

অর্থঃ আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের [আল্লাহর] প্রশংসা করছি।

এরপর আল্লাহু-আকবার বলে সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসবে এবং দুই সিজদার মাঝখানে এই দোয়াটি পড়বেঃ

رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ رَبِّ اغْفِرْلِيْ؛ اَللَّهُمَ اغْفِرْلِيْ، وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَارْزُقْنِيْ وَعَافِنِيْ وَاجْبُرْنِيْ.

উচ্চারণঃ রব্বিগ্ফিরলী-, রব্বিগ্ফিরলী-, রব্বিগ্ফিরলী-, আল্লাহুম্মাগ্ফিরলী-, ওয়ারহামনী-, ওয়াহদিনী-, ওয়ারযোকনী-, ওয়া 'আ-ফিনী-, ওয়াজবুরনী-।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে সুস্থ্যতা দান কর এবং আমার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ কর।

অতঃপর পুনরায় আল্লাহু-আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদা দিবে এবং প্রথম সিজদার অনুরূপ করবে।


আত্তাহিয়াতু বা তাশাহুদ


যা সর্বপ্রকার নামাযের মধ্যবৈঠক এবং শেষ বৈঠকে সিজদা থেকে উঠে বসার পরপরই পাঠ করা ওয়াজিব।


ﺍﻟﺘﺤﻴﺎﺕ ﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﻭﺍﻟﻄﻴﺒﺎﺕ -ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ - ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻭﻋﻠﻰ ﻋﺒﺎﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺼﺎﻟﺤﻴﻦ -ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ -ﻭﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ


[বুখারী : ৭৮৮]


বাংলা উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, ওয়াস সালাওয়াতু, ওয়াত- তাইয়্যিবাতু, আস সালামু আলাইকা, আইয়্যুহান নাবিয়্যু, ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, আস সালামু আলাইনা, ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস-সালিহীন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।


অর্থ : আমাদের সকল সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সব নামায এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমাদের এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর আল্লাহ্র রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদাতের যোগ্য) আর কেউ নেই,আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।

দরুদ শরীফ


اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَ اهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَ اهِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ । আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ ।

অনুবাদঃ যে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ । নিশ্চই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম । হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ । নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম ।

দোয়ায়ে মাসুরা

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِىْ وَلِوَ الِدَىَّ وَلِمَنْ تَوَالَّدَ وَلِجَمِيْعِ الْمُؤْ مِنِيْنَ وَالْمُؤْ مِنَاتِ وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالاْاَحْيَاءِ مِنْهُمْ وَالْاَمُوْ اَتْ بِرَحْمَتِكَ يَااَرْحَمَرَّحِمِيْنَ

উচ্চারনঃ আল্লাহুমাগ ফিরলী ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিমান তাওয়াল্লাদা ওয়ালি জামীঈল, মু’মিনীনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাত, ওয়াল আহ্ইয়ায়ি মিনহুম ওয়াল আমুয়াত, বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন ।

অনুবাদঃ হে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা! আমাকে, আমার পিতা মাতাকে, সন্তান-সন্ততিকে, সমস্ত মু’মিন পুরুষ ও নারীকে এবং জীবিত মৃত সমস্ত মুসলিম নর-নারীকে ক্ষমা কর ।

Comments

Popular posts from this blog

ইমাম আবু হানিফার নামে মিথ্যা বানোয়াট প্রতারণা

পীর কাকে বলে হাক্কানী পীর বনাম ভন্ড পীর

মুসলিম মাযহাব ছাডবে কেন