মুসলিম মাযহাব ছাডবে কেন

এক বিখ্যাত আলেমের উক্তি আমি মাযাহাব ছাড়লাম কেন


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মত বিভক্তি হবে ৭৩ দলে ৷ এদের সকল দলই জাহান্নাম যাবে এক দল ব্যতীত ৷ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন,
হে আল্লাহর রসুল ! সেটি কোন দল ?

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,  আমি এবং আমার সাহাবীগণ যার উপর আছি ৷
( মিশকাত ১ম খন্ড, হা/১৬৩)

মাযাহাব ৪টা : হানাফী, মালিকী, শাফিঈ, ও হাম্বেলী ৷ অামাদের বাংলাদেশে বেশীর ভাগই হানাফী মাযাহাবী মুসলমান ৷ মাযাহাবীদের মতে ৪ মাযাহাবের যে কোন একটি মাযাহাব মানা ফরজ ৷ যে কোন একটা মানতেই হবে, মাযাহাব না মানলে তারা লা মাযাহাবী।

হানাফীদের কথায় লা-মাযাবীগণ বিদাআতি, নাস্তিক, মুনাফীক, হঠকারী, সীমালঙ্ঘনকারী, একটা ফিতনা-ফাসাদ, বাতিল ফিরকা, শিয়াদের মতো কেউ কেউ বলেন তারা খারেজী থেকে উৎপত্তি।
এখন রসুলুল্লাহ (সা:)  এর কথায় একটা দল যাবে জান্নাতে, তাহলে কোন মাযহাবীগণ জান্নাতে যাবে?
 কোন মাযাহাব ঠিক?

মাযাহাবী বড় বড় আলেমগণ বলেন, হানাফী মাযাহাব জগদ্বিখ্যাত এবং সর্ববৃহৎ; জান্নাতে পৌঁছার জন্য এ দলের পথই সরল ও সহজ!!!

 আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) তার গুনিয়াতুত তালিবীন গ্রন্থের ২১০ পৃষ্টায় ৭৩ দলের বর্ণনা দিয়েছেন ৷ দেখুন বঙ্গানুবাদ " গুনিয়াতুত তালিবীন" ১ম খন্ড, ২য় সংস্করণ- ১৯৮১ ইং  অনুবাদ-নুরুল আলম রইসী, প্রকাশনায়-কমরুল হুদা খাঁ সিদ্দিকী, ইসলামিয়া লাইব্রেরী, অান্দরকিলা,চট্রগ্রাম ৷ ১৯৯ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে,

আহালে হাদিস হল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সঠিক অনুসারী ৷ ২২৫ পৃষ্টায় বলেছেন, মর্জিয়া দলের একটা উপদল হল হানাফিয়া যা পথভ্রষ্ট ৭২ দলের অন্তরর্ভূক্ত ৷ ২২৭ পৃষ্টায় তিনি বলেছেন, হানিফিয়া-এক সস্প্রদায়ের নাম হানাফিয়া। এরা আবু হানিফা নোমান বিন সাবিত-এর সাথে সম্বন্ধযুক্ত ৷ উক্ত কিতাবের ১৯৮ ও ১৯৯ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে  কতিপয় চিহ্ন ও বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান , যাহা আহালে বেদাতী মানুষকে চেনা সহজ ৷ বেদাতী মানুষ হাদিস কে অবজ্ঞা করে ৷ বিদাতী যিন্দীক গোত্র আহালে হাদিস, অর্থাৎ হাদিস অনুসারীদের মিথ্যাবাদী অাখ্যা দেয় ৷  এ ধরনের অবজ্ঞা সূচক কারণের হল, ঐ সকল বিদ'আতি - দল হাদিস অনুসারীদের প্রতি শত্রুতা ও ঈর্ষা পোষণ করে থাকে ৷

মুলতঃ অাহলে সুন্নাত তথা হাদিস অনুগামী ব্যক্তিদের পরিচয় একটি মাত্র নামেই, তা হল, আহালে হাদিস ৷ এছাড়া অন্য নামে তারা আখ্যায়িত নন।
"আব্দুল কাদির জিলানী (রহ:) ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের বহু পূর্বেই বলেছেন, হাদিস অনুগামী ব্যক্তিদের পরিচয় হল "আহালে হাদিস।

মালিক ইবন আনাস (রা:) হতে মুরসালরুপে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদের নিকট দুইটি জিনিস রেখে যাচ্ছি ৷ যতক্ষণ তোমরা সে জিনিষ দুটি আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, গোমরাহ হবে না, এ দুটি জিনিষ হল আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ও তাহার রাসুলের সুন্নাহ ( সহীহ হাদিস ) (মিশকাত,১ম খন্ড হা/১৭৭)
যারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আশেকে দেওয়ানা হয়ে প্রতি বৎসর মিলাদে নবী, অাশেকে রাসুল, জসনে জলুস পালন করেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) -এর মহব্বত পাবার আশায়, তারাই যে আল্লাহর কুরআন ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাত পরিত্যাগ করে বিভিন্ন মাযাহাবী ইমাম ও আলিমগণের ইজমা-কিয়াসের সাহায্যে কোরআনের মতো আল হিদায়ার মাসালা-মাসায়েল দ্বারা সৃষ্ট "ফিকহে ইসলাম" মান্য করেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী অমান্য করে গোমরাহীতে ডুবে আছেন, তা উপলব্ধি করার মতো জ্ঞানটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছেন ৷
আমাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুগত হয়ে এবং গোমরাহ হয়ে যাবার ভয়ে হানাফী ছেড়ে আমি মুসলিম হয়ে গেলাম ৷

নবী মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন সমস্ত মানব জাতির লিডার। এক  জন আদর্শ  মানুষ ইমাম আবু হানীফ রঃ কিন্তু তার নামে এরকম মিথ্যা  অপবাদ দাওয়া কি ঠিক হচ্চে।

 আসুন হানাফী মাযহাবীদের কিছু মিথ্যা,বানোয়াট বক্তব্য শুনি-
◉ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ৫৫ বার হ্জ্জ্ব করেছেন।
◉ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) আল্লাহকে ১০০ বার স্বপ্নে দেখেছেন।
◉ ৪০ বছর একটানা এশার ওযু দ্বারা ফজরের সালাত আদায় করেছেন।
◉ ৩০ বছর একটানা রোজা রেখেছেন। বছরের যেই পাঁচদিন রোজা রাখা হারাম, সেই পাঁচ দিন তিনি রোজা রাখেন নাই, তবে সেই ৫ দিনও তিনি কোন খাবার গ্রহণ করেন নাই।
 
তাহক্বীকঃ
৪০ বছর একটানা এশার ওযু দ্বারা ফজরের সালাত আদায় করার কিচ্ছাকে যদি সত্যি ধরে নেই তবে তাঁকে স্ত্রী সহবাস দিনে করতে হয়েছে। কিন্তু আবার বলা হচ্ছে ৩০ বছর একটানা রোজা রেখেছেন। অথচ রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস অসম্ভব! সুতরাং এই দুটি কিচ্ছা একটি অপরটির বিপরতী। একটি বক্তব্যকে সত্য ধরে নিলে অন্যটিকে মিথ্যা স্বীকার করতে-ই হবে।

মুলত এই বক্তব্যগুলো সব মিথ্যা বানোয়াট কথা। অনেকটা সোনাবানুর কিচ্ছার মতো। এরা তাদের মাযহাবের ইমামাকে বাড়াতে বাড়াতে কখন যে হযরত মুহাম্মদ ﷺ থেকেও উপরে তুলে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিযোগীতায় মেতে চলেছে তা তারা বুঝতেও পারছে না। তাই তো হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর সহীহ হাদীসের দাওয়াত তাদের পছন্দ হয়ে না। প্রত্যেক আমলের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবের রেফারেন্স খোঁজা হয়, সহীহ হাদীস নয়। তাদের এসব কথা শুনলে মনে হয় যেন, কোরআন হাদীস নয়, হানাফী মাযহাবই আমাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ধর্ম; হযরত মুহাম্মদ ﷺ নয়, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) -ই তাদের নবী!

আল্লাহ পাক এমন আলেম নামের জাহেলদের মিথ্যাচার আর বাড়াবাড়ি থেকে মুসলীম উম্মাহকে হেফাজাত করুন!
 ইমাম আবু হানিফা রহ. কাবা ঘরের ভিতরে ২ রাক’আত সালাত পড়লেন। ঐ সালাতে ডান পায়ে দাড়িয়ে ১৫ পারা কোরআন পড়েছেন। বাম পায়ে দাড়িয়ে বাকী ১৫ পারা পড়েছেন। মানে পুরো কোরআন খতম করেছেন মাত্র ২ রাক’আত সালাতে।
সোবহান আল্লাহ
তাহ্বকীকঃ
১। হানাফী ফিকহের প্রায় প্রতিটি কিতাবে ১ পায়ে দাড়িয়ে সালাত আদায় করাকে মাকরুহ বলা হয়েছে। যার নামে এই মাযহাব সৃষ্টি সেই মাযহাবের স্রষ্টা (!) কি এই ফতোয়া জানতেন না? অবাক..!

২। রমাদান মাসে আমরা যে 3G গতিতে তারাবী সালাত পড়ি সেখানে প্রায় ২ পারা কোরআন পড়তে সময় লেগে যায় ১ ঘন্টা। সেই 3G/4G গতিতেও যদি তিনি সালাত আদায় করেন তবে তার সময় লাগবে প্রায় ১৫ ঘন্টা। এই সময়ের মধ্যে কি ফরয সালাতের সময় হয়নি? যদি হয়ে থাকে তাহলে কি ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. সালাত ত্যাগকারী?
এটা কি তাঁর শানে চিন্তা করা যায়?

৩। ৩ দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করা সহীহ হাদীস বিরোধী। ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. কি ঐ সহীহ হাদীস সমূহ জানতেন না?

মুলত এগুলো সব অন্ধ মাযহাবীদের বানানো কিচ্ছা-গল্প। তাদের মাযহাবের ইমামকে বড় করতে হবে সবার থেকে তাই এই মিথ্যাচার।

হে আল্লাহ যারা ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নামে মিথ্যাচার করে তাদেরকে তুমি হেদায়াত দাও এবং পথভ্রষ্ট আলেম থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষা করো।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর নামে মিথ্যা ফজিলতের বর্ননাঃ

ইমাম আবু হানিফা রহঃ ত্রিশ বছর কিংবা চল্লিশ বছর কিংবা পন্চাশ বছর এশা ও ফজরের সালাত একই অযূতে পড়েছেন।তার সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে,ওযূর পানি ঝরার সময় তিনি বুঝতে পারতেন এর সাথে কোন পাপ ঝরে যাচেছ।উল্লেখ্য যে,ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া) এর অধীনে ফাজিল স্নাতক প্রথম বর্ষের আল-আক্বাঈদ বইয়ে আবু হানিফা রহঃ এর গুনাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে,তিনি একাধারে ৩০ বছর রোজা রেখেছেন এবং ৪০ বছর যাবত রাতে ঘুমাননি।ইবাদত বন্দেগীতে রজনী কাটিয়ে দিতেন।প্রতি রমজানে ৬১ বার কুরআন মাজীদ খতম করতেন।অনেক সময় এক রাকাতেই কুরআন মাজীদ এক খতম দিতেন।তিনি ৫৫ বার হজ্ব করেছেন।জীবনের শেষ হজ্বের সময় কা'বা শরীফে এভাবে দু 'রাকাত নামাজ পড়েন যে,প্রথম রাকাতে এক পা উঠিয়ে প্রথম অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন।তারপর দ্বীতিয় রাকাতে অপর পা উঠিয়ে বাকি অর্ধাংশ কুরআন মাজীদ পাঠ করেন।যে স্থানের তাঁর ইন্তেকাল হয়েছে,সেখানে ১০০০ বার কুরআন খতম করেছেন।তিনি ৯৯ বার আল্লাহকে স্বপ্নে দেখেছেন। ( রচনা ও সম্পাদনাঃমাওলানা মুহাম্মদ আবু ইউসুফ খান,আল-আকাঈদ আল -ইসলামিয়া ( ঢাকাঃ আল-বারাকা লাইব্রেরী, ৩৪, নর্থব্রুক হল রোড,বাংলাবাজার,ঢাকা ১১০০),পৃঃ ৪৫)।

তারা ইমাম আবু হানিফা (র) সম্মান বাড়াতে গিয়ে তাকে আরো ছোটো করেছে, আর একশ্রেনীর ভ্রান্ত আলেমগণ ইমাম আবু হানিফার (র) এর নামে এসব গাঁজাখুরি কিচ্ছা বানিয়ে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে খেলছে!
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসকল পথভ্রষ্ট আলেম থেকে হেফাজত করুন।
 

Comments

Popular posts from this blog

ইমাম আবু হানিফার নামে মিথ্যা বানোয়াট প্রতারণা

পীর কাকে বলে হাক্কানী পীর বনাম ভন্ড পীর