নারী পুরুষের সালাতের পদ্ধতিগত কোন পার্থক্য আছে কি

প্রশ্ন: নারী-পুরুষের সালাতের পদ্ধতিগত কোন
পার্থক্য আছে কি?
উত্তর : মুসলিম জাতীর জন্য একটি ফরয ইবাদত
হচ্ছে সালাত বা নামায। যা কোন অজুহাতেই
পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়। আর পরকালে সর্বপ্রথম
এই সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তবে
আমাদের সমাজে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে
সালাত আদায়ে পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু
মহানবী (সঃ) কখনও বলে যাননি যে, পুরুষ ও
মহিলাদের মধ্যে সালাত আদায়ে পার্থক্য
আছে। তাঁর সময় নারী-পুরুষ একসাথে
জামায়াতে নামায আদায়ের বহু হাদিস
রয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ছল্লু কামা রআইতুমুনি
উছল্লি” – “তোমরা সেই ভাবে সালাত আদায়
কর , যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে
দেখ” (মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২)
এবং
রাসূলের আনুগত্য না করে অন্য কারো আনুগত্য
করলে তাকে নিজের ‘রব’ বানানো হবে,
যেহেতু আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “তারা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও পীর/
দরবেশদেরকে নিজের ‘রব’ বানিয়ে
নিয়েছে।” (সূরা তওবা: আয়াত ৩১)
সালাত আদায় করার জন্য নারী পুরুষ কারোর
জন্য স্বতন্ত্র নিয়ম করা হয়নি। জিবরাঈল (আঃ)
মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ ক্রমে দুই
দফায় রাসূল (সাঃ)-কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের
নিয়ম পদ্ধতি ইমামতি করে বাস্তবভাবে
শিখিয়ে গেছেন। এ সময় জিবরাঈল (আঃ)
নারীদের সালাতের জন্য আলাদা কোন নিয়ম
পদ্ধতির বর্ণনা দেন নাই। নারী-পুরুষ
নির্বিশেষের জন্য এ নমুনা শিখানো হয়েছে।
আল্লাহর নিয়ম পদ্ধতিতে কখনও কোন পার্থক্য
দেখা যাবে না। এ মর্মে মহান আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
“আর আপনি আল্লাহর নিয়ম-রীতিতে কখনও কোন
পরিবর্তন পাবেন না।” [সূরা-আহযাব : আয়াত-৬২]
রাসূল (সাঃ) নিজেও বহু সাহাবীদের
উপস্থিতিতে সালাত কেমন করে আদায় করতে
হয় বাস্তবভাবে রুকু, সিজদাহ ইত্যাদি করে
দেখিয়েছেন। তারপর রাসূল (সাঃ) দৃঢ়তার
সাথে জোড়ালো ভাষায় বললেন,
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায়
করতে দেখ, ঠিক সেভাবেই সালাত আদায়
কর।” [মেশকাত, ২য় খন্ড, হাদীস ৬৩২]
এ কথা প্রণিধানযোগ্য যে, আল্লাহ তায়ালা ও
রাসূল (সাঃ) যে কাজকে নারী পুরুষদের জন্য
নির্দিষ্ট করে পার্থক্য করার বর্ণনা বা
নির্দেশ দেন নাই তা পুরুষ মহিলা
নির্বিশেষে পার্থক্য না করেই পালন করতে
হবে। যেহেতু রাসূল (সাঃ) সকল নারী পুরুষের
জন্যই সমানভাবে অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য, এ
ব্যাপারে কোন মতভেদ নাই নিশ্চয়ই।
সালাতের ব্যপারেও এ সত্য যথার্থই কার্যকর
বলে গ্রহণ করতে হবে। তবে মহিলাদের সালাত
আদায়ে যে পার্থক্যগুলো দেখা যায় সেগুলো
বাহ্যিক এবং সালাতের বাইরে বিবেচিত।
এগুলো নিম্নরূপঃ
১) সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু
মহিলা আযান দেবে না।
২) সালাতে মহিলা মাথা ঢেকে রাখবে,
কিন্তু পুরুষের মাথা না ঢাকলেও সালাত হয়ে
যাবে।
৩) মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে
হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না।
অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা
রাখতে হবে।
৪) কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে
না, কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি
করতে পারবে। মহিলা অবশ্য শুধু মহিলাদের
জামায়াতে ইমামতি করতে পারবে।
৫) জামায়াতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার
পুরুষদের কাতারের পিছনে থাকবে।
৬) পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী
দাড়াঁতে হবে, যদি ওজর না থাকে। কিন্তু
মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের
কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। [বর্ণিত
আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা
(রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা
তারাবীহ এর সালাতে জামায়াতে ইমামতি
করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৭) যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে
হাত তালি দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে
সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষদেরকে
উচ্চঃস্বরে তাকবীর বলতে হবে।
৮) তাকবীরে তাহরীমার সময় পুরুষদের চাদর বা
কম্বল ইত্যাদি হতে হাত বের করে কাঁধ বা কান
পর্যন্ত উঠাতে হবে, অবশ্য ওজর না থাকলে।
কিন্তু মহিলাদের চাদরের বা ওড়নার ভিতরে
হাত রেখেই কাঁধ বা কান পর্যন্ত হাত উঠাতে
হেব; তাকবীরের সময়ও এভাবে করতে হবে।
৯) মসজিদ হতে মহিলারা সালাত শেষ হলেই
বের হয়ে যাবে, আর পুরুষরা পরে বের হবে।
উপরোক্ত বাহ্যিক করণীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য
কোন পার্থক্য পুরুষ ও মহিলাদের সালাতে
নেই। পুরুষ-মহিলাদের সালাত আদায়ের
ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাকবীরে তাহরীমা, হাত
বাঁধা, রুকু, সিজদাহ, উঠা-বসা ইত্যাদি
ক্ষেত্রে কোন পার্থক্য নেই। মহিলাদের
সালাত আদায়ে আমাদের দেশে যে পার্থক্য
প্রচলিত আছে তা সহীহ হাদীস ভিত্তিক তো
নয়ই, দলীল ভিত্তিকও নয়, বরং কতকগুলো যঈফ ও
নিতান্ত দুর্বল হাদীস এবং অসমর্থিত ও মনগড়া
লেখা বই হতে প্রচলিত হয়েছে।
সুতরাং ছেলে মেয়ে উভয়ে রাসুল্লাহ(সা)
যেভাবে নামাজ পড়েছে ঠিক সেভাবেই
নামাজ পড়বে।(বুখারি:৬৩১)
উদাহরণস্বরুপ,
*রাসুল্লাহ (সা) নামাজে বুকে হাত বাধতেন
(সহিহ বুখারি:৭৪০, সহিহ মুসলিম:১৭৩ পৃষ্টা আবু
দাউদ:৭৫৯)
*হাঁটুর উপরে দু’হাতে ভর দিয়ে পা, হাত, পিঠ ও
মাথা সোজা রেখে রুকু করতেন(বুখারি ও
মুসলিম)
*সিজদা করার সময় দু’হাত ক্বিবলামুখী করে
মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর মাটিতে
স্বাভাবিকভাবে রাখতেন। এবং কনু

Comments

Popular posts from this blog

ইমাম আবু হানিফার নামে মিথ্যা বানোয়াট প্রতারণা

পীর কাকে বলে হাক্কানী পীর বনাম ভন্ড পীর

মুসলিম মাযহাব ছাডবে কেন